• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে নেই উৎসবের আমেজ, জনসম্পৃক্ততার ঘাটতি বলছেন ভোটাররা

  • ''
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২৪

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাকী আর অল্প কয়দিন। নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন উৎসাহ নেই সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। কখন ভোট তাও যানা নেই অনেক ভোটারের। তবে কালীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান,ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে জয়ের লক্ষে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থীরা।ভোটের ঢাক ঢোল পিটিয়ে আগে থেকেই নির্বাচনী মাঠে ছিলেন তারা। সে লক্ষেই মনোনয়নপত্র ক্রয় ও জমাও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই চেয়ারম্যান পদের ভাইটাল দুই প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু ও উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ওলিয়ার রহমানের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে নির্বাচনী ইমেজ অনেকটা ঝিমিয়ে হয়ে পড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তাদের স্ব-স্ব দলীয় সাংগাঠনিক অবস্থা মজবুত থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে উঠে এসেছে বিভিন্ন মন্তব্য। কেউ বলছে, এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতিক না থাকা বা দলের একক প্রার্থী চুড়ান্ত না হওয়ায় তারা ভোট থেকে সরে গেছেন। আবার কেউ বলছে,দলীয় সংগঠনের নির্দ্দেশনায় সরে গেছেন তারা। তবে এসব বিষয় ছাড়াও সাধারন ভোটারদের অভিমত এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহনকারী প্রার্থীরা সবাই সরকারি দলের নেতা। যে কারনে কোন বিরোধীদলীয় পক্ষ না থাকায় যেন এক দলের নেতা বাছাইয়ের মত ভোটযুদ্ধ হচ্ছে। সবমিলিয়ে এমন অবস্থায় কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনী ইমেজ উৎসব অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে। তারপরও প্রতিক পেয়েই প্রার্থীরা শহর গ্রামাঞ্চলে তাদের প্রচার প্রচারনা ও ভোট ভিক্ষায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সেভাবে আমেজ নিয়ে ঘুরছে না।

কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারনা দেখা গেছে ভিন্ন দৃশ্য। প্রতিদিন দুপুর ২ টা বাজার সাথে সাথে নির্বাচনে মাইকিং বের হচ্ছে। কিন্তু কর্মী-সমর্থক ভরা চাঁদের গাড়ী দেখা গেলেও এখন প্রচারনাটা যেন ডিজিটালে ছোয়া লেগেছে। গাড়ীতে ক্যাসেট এ চলছে প্রার্থীদের রেকর্ডিং প্রচারনা। কারীগঞ্জ শহর ও প্রত্যান্ত এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে দূর্গম এলাকাকে র্টাগেট রেখে ভোটারদের মন জয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।ইতিমধ্যে ভোটারদের মধ্যেও নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের হিসাব নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। ভোটারা যোগ্য,শিক্ষিত,তরুণ ও মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি চেয়ারম্যান জয়যুক্ত করা গেলে উন্নয়ন তরান্বিত হবে বলে চায়ের দোকানে দোকানে চলছে গুঞ্জন। তবে এবার জয়ের উৎসাহটা যেন প্রার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটের প্রতি যেমনি নেই উৎসাহ তেমনি এখন চারদিকে যেন ভোটের মাঠে হাহাকার শব্দটা দৃশ্যমান।

এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইটাল দুই প্রার্থীর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের পর চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন,তারা হলেন বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শিবলী নোমানী (আনারস) প্রতিক, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন সোহেল (টেলিফোন) প্রতিক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি (মটর সাইকেল) প্রতিক, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ালীগের সাধারণ সম্পাদক ডা: রাশেদ শমসের (হেলিকপ্টার) প্রতিক ও জাতীয় শ্রমিক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সহ-সভাপতি ইমদাদুল হক সোহাগ (কাপ পিরিচ) প্রতিকে নির্বাচন করছেন। এছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছে। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা সহ এ উপজেলার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হইবে আগামী ৮ই মে।মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিষয়ে বিগত তিন বারের নির্বাচিত বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের প্রবিননেতা জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু জানান, ইতিপূর্বে তিনি দলীয় মনোনয়নেই নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। কিন্তু এবার তার দল আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন বা প্রতিকের বাইরে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারনে দলের একাধিক প্রার্থী হয়েছেন। যারা প্রার্থীরা সবাই তার জুনিয়র। সে কারনে শেষ মুহুত্বেও একক প্রার্থীতে কেউই সমঝোতা বা আলোচনা না করায় তিনি তার নিজ ইচ্ছাই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

অপরপ্রার্থী উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ওলিয়ার রহমান জানান, প্রথম ধাপে নির্বাচনে সারাদেশে তাদের দলের হয়ে ৮০ জন প্রার্থী হয়েছিল। সর্বশেষ তাদের দলের কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত আসে নির্বাচন করা যাবে না। তাই তিনি ও ভাইচচেয়রিমম্যা মাওলানা আলিনুর রহমান মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এবারের ভোট নিয়ে সাধারন ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সকল প্রার্থীই আওয়ামীলীগের। সে কারনে বিরোধীদল বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কেউ অংশ না করায় ভোটের উৎসব ও আমেজ অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছে। কারো কারো অভিমত এবারের নির্বাচনে ব্যাক্তিগত যোগ্যতাই প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে হবে।

তৃণমূলের ভোট,তবুও উৎসবের ছোঁয়া লাগেনি মানুষের মনে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের বাইরে খুব একটা আলোচনাও নেই।বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনে জনসম্পৃক্ততার ঘাটতি রয়েছে। সব দলের অংশ গ্রহন না থাকা এবং প্রার্থী হওয়ার পথে দলীয় প্রভাব ও বাধাকেই এর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন তারা।এছাড়া বিগত বছর গুলোয় উপজেলা পরিষদগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন না করায় আগ্রহ হারিয়েছে জনগণ। এজন্য পরিষদ কার্যকর করা ও রাজনৈতিক সংকট দূর করার তাগিদও দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।তাই বলা চলে, বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট দূর করতে না পারলে ভোটের সংস্কৃতিতে সহসা পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না ভোটাররা। দিন শেষে যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে তৃণমূলের ভোটে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads